কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন
কৃষি বিষয়ক
নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
মোছা : শেফালি বেগম, গ্রাম: সরফরাজপুর, উপজেলা: চৌগাছা, জেলা: যশোর
প্রশ্ন: পেঁয়াজে কাটুই পোকা দমন বিষয়ে জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: এ পোকা রাতের বেলা মাটি বরাবর গাছ কেটে দেয়। সকাল বেলা চারা মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সকাল বেলা কেটে ফেলা চারার আশে পাশে মাটি খুঁড়ে পোকা বের করে মেরে ফেলতে হবে এবং সেচের পানির সাথে কেরোসিন মিশিয়ে সেচ দিতে হবে। রাতে ক্ষেতের মাঝে মাঝে আবর্জনা জড়ো করে রাখলে তার নিচে কীড়া এসে জমা হবে, সকালে সেগুলোকে মেরে ফেলতে হবে। এছাড়া পাখি বসার জন্য ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে দিয়েও এ পোকা দমন করা যায়। আক্রমণ বেশি হলে বাইপোলার ৫০ ইসি বা সার্টার ৫০ ইসি ১.৫ মিলি./লি. হারে পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে।
মোঃ শরিফ উদ্দীন, গ্রাম: পিরোজপুর, উপজেলা: মেহেরপুর সদর, জেলা: মেহেরপুর
প্রশ্ন: ছোলা গাছের ভেতরের পাতাগুলো হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায়। এমনকি ছোলা গাছ ঝাকি দিলে সব পাতা ঝরে পড়ে। এ সমস্যা কিভাবে দূর করব ?
উত্তর: ছোলা গাছের এ সমস্যাটিকে বট্রাইটিস গ্রে মোল্ড বলা হয়ে থাকে। এটি ছত্রাকজনিত। ছোলা গাছের এ সমস্যা দূরীকরণে প্রথমে দেখতে হবে ক্ষেতের ছোলাগাছ ঘনভাবে লাগানো কি না। যদি সেটি হয় তবে ছোলাগাছ পাতলা করতে হবে। এছাড়া আক্রান্ত গাছে অ্যাক্রোবেট এম জেড ২ এমএল প্রতি লিটার পানিতে অথবা অটোস্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন অন্তর ২ থেকে ৩ বার সঠিক নিয়মে স্প্রে করতে হবে। এমনকি রোগ প্রতিরোধী বারি ছোলা ১০ বা বারি ছোলা ১১ জাতের চাষ করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
মো. ইব্রাহিম তালুকদার, গ্রাম: দৌলতপুর, উপজেলা: নড়াইল সদর, জেলা: নড়াইল
প্রশ্ন : পেঁয়াজের ভালো ফলন পেতে কী করণীয় ? জানাবেন।
উত্তর : পেঁয়াজের বৃদ্ধি এবং ভালো ফলনের জন্য সালফার সার প্রয়োগ জরুরি। কারণ পেঁয়াজের কন্দ উৎপাদনে সালফার ও ম্যাগনেসিয়ামের মধ্যে সালফারের গুরুত্ব অপরিসীম। পরীক্ষায় পেঁয়াজের বৃদ্ধি পর্যায় থেকে শুরু করে সংরক্ষণ পর্যায়ে র্পেঁয়াজের ফলন নিয়ন্ত্রিত জাতের তুলনায় ২৯.৪১% বেশি পাওয়া যায়। এমনকি প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে পেঁয়াজে গুণগত মান অপেক্ষাকৃত উত্তম। এ প্রযুক্তিতে সালফারের ট্রিটমেন্ট হলো ৩৩ কেজি/হেক্টর। এসব পদ্ধতি মানলে আশা করি অবশ্যই ভালো ফলন পাবেন।
মো: নিয়ামুল কবীর, গ্রাম: রনসিয়া, উপজেলা: পীরগঞ্জ, জেলা: ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন: নেটেড মেলন চাষের সারের প্রয়োগমাত্রা সর্ম্পকে জানাবেন।
উত্তর : নেটেড মেলন চাষের জন্য পচা গোবর সার ১০০০০ কেজি, ইউরিয়া ১৫০ কেজি, টিএসপি ১৭৫ কেজি, এমওপি ১৫০ কেজি, জিপসাম ১১০ কেজি, জিংক সালফেট ১০ কেজি, বোরিক এসিড ১০ কেজি হেক্টর প্রতি প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে অর্ধেক গোবর সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হয়। অবশিষ্ট গোবর এবং সম্পূর্ণ টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বরিক এসিড এবং এক-তৃতীয়াংশ এমওপি পিট বা মাদা তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হয়। সম্পূর্ণ ইউরিয়া এবং অবশিষ্ট এমওপি দুইটি সমান কিস্তিতে চারা স্থানান্তরের ২১ দিন ও ৩৫ দিন পর প্রয়োগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এভাবে নেটেট মেলনের চাষাবাদ করলে উপকার পাওয়া যায়।
মোঃ রেজাউল শেখ, গ্রাম: বামনডাঙ্গা, উপজেলা: আশাশুনি, জেলা: সাতক্ষীরা
প্রশ্ন: নারকেলের পাতা ও ফলের দাগ দমন সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর : পাতা ও ফলের দাগ রোগ বাইপোলারিস হ্যালোডিস, পেস্টালোশিয়া পালম্যারাম, গিøওক্ল্যাডিয়াম রোসিয়াম নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে।
শীতকালে এ রোগের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। বর্ষাকালে গাছের বৃদ্ধি শুরু হলে এ রোগের আক্রমণ অনেকটা কমে যায়। এ রোগের লক্ষণ হলো-রোগের আক্রমণে পাতার উপর গোলাকার ছোট ছোট বাদামি দাগের সৃষ্টি হয়। ছোট দাগগুলো বড় হতে থাকে এবং কিছু দাগ একত্র হয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে। দাগের কারণে পাতার অনেক অংশ নষ্ট হয়ে যায়। দাগের মধ্যে জীবাণুর বীজকণা (কনিডিয়া) উৎপন্ন হয়। আক্রমণ পাতা থেকে ডাবে ছড়িয়ে পড়ে। ডাবের গায়ে বাদামি দাগের সৃষ্টি হয়। দাগ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। বাদামি দাগের জন্য ডাবের বা নারিকেলের দাম কমে যায়। এ রোগ প্রতিকারে গাছের রোগাক্রান্ত পাতা ও ফল সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে। খরা মৌসুমে চারা গাছে সেচ ও সুষম সার প্রয়োগ করা দরকার। কার্বেন্ডাজিম গ্রæপের ছত্রাকনাশক যেমন-অটোস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম অথবা প্রোপিকোনাজোল গ্রæপের ছত্রাকনাশক যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে গাছের পাতা ও ফলে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার গাছে ¯েপ্র করতে হবে।
মোছা: আসমাউল হুসনা, গ্রাম: খাটুরিয়া, উপজেলা: গোবিন্দগঞ্জ, জেলা: গাইবান্ধা
প্রশ্ন: মরিচ গাছে মাকড়ের আক্রমণ হয়েছে। কী করণীয় ?
উত্তর: মরিচ গাছে মাকড়ের লার্ভা এবং পূর্ণবয়স্ক মাইট গাছের কোষ ছিদ্র করে রস শোষণ করে। ফলে পাতা ফ্যাকাশে, মোচড়ানো এবং নিচের দিকে বাঁকানো হয়। পাতা চামড়ার মতো হয়ে যায় এবং শিরাগুলো মোটা হয়। পাতা এবং কচি কান্ড লালচে বর্ণের হয়। ফুল ঝরে পড়ে এবং ফল বিকৃত, অপরিপক্ব এবং অসম আকৃতির হয়। সেচ প্রয়োগের মাধ্যমে এর আক্রমণ কমানো সম্ভব। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে সালফার জাতীয় মাকড়নাশক যেমন কুমুলাস ডিএফ বা রনোভিট ৮০ ডবিøউ জি বা থিওভিট ৮০ ডবিøউ জি বা সালফোলাক ৮০ ডবিøউ জি, ম্যাকসালফার ৮০ ডবিøউ জি বা সালফেটক্স ৮০ ডবিøউ জি প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। মাইটগুলো সাধারণত পাতার নিচের দিকে থাকে, এ জন্য স্প্রে করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পাতার নিচের অংশ সম্পূর্ণভাবে ভিজে যায়। আশা করি উপকৃত হবেন।
মৎস্য বিষয়ক
মোঃ হাফিজুর রহমান, গ্রাম: লক্ষীরপাড়, উপজেলা: বিশ^ম্বপুর, জেলা: সুনামগঞ্জ
প্রশ্ন: মাছের ভিটামিনের অভাব এবং অপুষ্টিজনিত রোগ হলে কী করব?
উত্তর: পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে এর অভাবজনিত কারণে মাছের অন্ধত্ব এবং ঘাড় বাঁকা রোগ দেখা যায়। ভিটামিন বি এর অভাবে মাছের ক্ষুধামন্দা, ¯œায়ু দুর্বলতা, রক্ত শূন্যতা এবং ত্বক ও ফুলকার ওপর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মাছের খাবারে হজমযোগ্য আমিষের অভাবে মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে। এর কারণেই মাছ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। পুকুরে উদ্ভিদ ও প্রাণিজ কণাসহ প্রাকৃতিক খাবারের পর্যাপ্ত উৎপাদন নিশ্চিত করতে হয়। আর এসব সমস্যা প্রতিকারে ও প্রতিষেধক ব্যবস্থা হিসেবে ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবার পুকুর বা জলাশয়ে প্রয়োগ করলে মাছের অপুষ্টিজনিত রোগ দূর হয়।
মোছাঃ সালমা বেগম, গ্রাম: এরাইগা, উপজেলা: পীরগঞ্জ, জেলা: ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন: মাছের শরীরে রোগ দেখা যাচ্ছে। কী করব ?
উত্তর: স্বল্প পিএইচ বা অ¤ø পানিতে পুকুরের তলায় বিচরণকারী মাছসমূহের গায়ে জোঁকের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। জোঁকগুলো ত্বক থেকে দেহের রস শোষণ করতে গিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে যাতে পরবর্তীতে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। হেমিক্লেপসিস মার্জিনেটা এ রোগের কারণ। পুকুর প্রস্তুতিকালে প্রতি শতাংশে এক কেজি হারে চ‚ন প্রয়োগ করলে পরবর্তী মৌসুমে জোঁকের প্রাদুর্ভাব থাকে না। বহিঃপর জীবীনাশক হিসবে টাইকোফেন ভেট ৩ ফুট গভীরতার পুকুরে প্রতি শতকে ৫ গ্রাম পাউডার ২৫০ মিলি পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
প্রাণিসম্পদ বিষয়ক
মোঃ শরিফুল ইসলাম, গ্রাম: পূর্বভীষণদই, উপজেলা: হাতিবান্দা, জেলা: লালমনিরহাট
প্রশ্ন: গরুর ক্ষুরা রোগ হয়েছে। কী করব ?
উত্তর: ক্ষুরা রোগের কার্যকর কোনো চিকিৎসা নেই। যা করণীয় তা হলো উপসর্গজনিত চিকিৎসা। এন্টিবায়োটিক ওষুধ হিসাবে সেফট্রাইএক্সন অথবা পেনিসিলিন ও স্ট্রেপটোমাইসিন গ্রæপের ইনজেকশন দিতে হবে। এসাথে ক্লোরফেনিরামিন মেলিয়েট গ্রæপের ওষুধ দিতে হবে। জ¦র কমানোর জন্য কিটো প্রফেন বা মেলোক্সিকাম ব্যবহার করা যেতে পারে। মুখে ঘা এর জন্য সোহাগা ব্যবহার করতে পারেন। শুকনো কড়াইতে সোহাগা ভেজে মধুর সাথে মিশিয়ে লাগাতে হবে। পায়ের ঘায়ে নেবানল বা ব্যসিট্রামিন মলম লাগাতে পারেন। যা ওলানে চলে আসলে একই মলম লাগাবেন। মাছির আক্রমণ প্রতিহত করতে আক্রান্ত স্থানের আশেপাশে তারপিন তেল লাগাবেন বা স্প্রে করবেন। সেরে ওঠার পর গরুকে ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি সম্বলিত ওষুধ দেয়া ভালো।
মোঃ রাশেদুল ইসলাম, গ্রাম: তাহেরপুর, উপজেলা: বাগমারা, জেলা: রাজশাহী
প্রশ্ন: আমার মুরগির বয়স ১০ দিন। মুরগিগুলো খুব দুর্বল, হাঁটতে পারছে না। প্যারালাইজড হয়ে যাচ্ছে। কী করব ?
উত্তর: ছোট মুরগির বাচ্চাদেও ভিটামিন বি এর অভাবে এ সমস্যা দেখা যায়। এ সমস্যা দেখা দিলে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে। অধিক ভালো ফলাফলের জন্য সাথে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট দেয়া যেতে পারে। আশা করি উপকার পাবেন। য়
(মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রশ্ন কৃষি কল সেন্টার হতে প্রাপ্ত)
উপপ্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, ফোন নং: ০২-৫৫০২৮৪০০, ই-মেইল : taufiquedae25@gmail.com